নতুন উদ্যোক্তারা প্রায়ই একটা প্রশ্নে কনফিউজড হয়ে যান —
“সেলস বাড়াতে সবচেয়ে জরুরি কী? ফেসবুক অ্যাডস, ভালো কনটেন্ট, স্ট্র্যাটেজি নাকি ল্যান্ডিং পেজ?”
আসলে, একটার সঙ্গে আরেকটা গভীরভাবে যুক্ত। একটি অংশের ঘাটতি থাকলে পুরো সেলস ফানেল ঠিকভাবে কাজ করে না। সবগুলো মিলে তৈরি করে আপনার মার্কেটিং সাকসেস ফর্মুলা।
চলুন দেখি, কোনটা কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং কিভাবে একসাথে কাজ করে সেলস বাড়াতে সাহায্য করে।
ফেসবুক অ্যাডস:
আপনার প্রোডাক্ট যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে, বিক্রির সম্ভাবনাও তত বাড়বে। ধরা যাক, আপনি যদি ১ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছান, হয়তো ১০০ জন কিনবে। কিন্তু যদি সেই সংখ্যা ৩ লাখে বাড়ান, বিক্রির সম্ভাবনা তিনগুণ বেড়ে যাবে।
এই বিশাল রিচ পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হলো — Facebook Ads, কারণ এখানেই এখন বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ সময় কাটায়।
তবে শুধু বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোই লক্ষ্য নয় —যারা সত্যিই কিনতে আগ্রহী বা সক্ষম, তাদের কাছেই পৌঁছাতে হবে। এই নিখুঁত টার্গেটিং-ই ফেসবুক অ্যাডসকে করে তোলে এত শক্তিশালী।
মনে রাখবেন — কোনো মানুষ একবার বিজ্ঞাপন দেখেই দৌড়ে গিয়ে কেনাকাটা করে না। তাকে বারবার মনে করিয়ে দিতে হয়, চোখের সামনে আনতে হয়। এই রিমাইন্ডার প্রক্রিয়াতেই ব্র্যান্ড রিকল তৈরি হয় আর সেটাই বিক্রিতে রূপ নেয়।
তাহলে এবার সংক্ষেপে বলি, সেলস বৃদ্ধিতে ফেসবুক অ্যাডস জরুরি ৩টা মূল কারণে:
- যার প্রয়োজন তার কাছেই মেসেজটা পৌঁছানোর জন্য
- ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কাছে ব্র্যান্ড বা সার্ভিসকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য
- একই ব্যক্তির মনের দরজায় বারবার নাড়া দিয়ে কিনার ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা
আপনারা যারা শুধুমাত্র ফেসবুক অ্যাডসের উপরে ডিপেন্ড করে আছেন তাদের বলছি — গুগল অ্যাডসে যান, SEO করুন।
আমরা জানি এর পরেও এগুলো ট্রাই করবেন না, যখন একেবারে তলানিতে পড়বেন তখন ঠিকই আফসোস করবেন।
কনটেন্ট:
চলুন একটু ভেবে দেখি, প্রতিদিন আপনার নিউজফিডে কত অ্যাড আসে?
সবগুলো অ্যাড কি আপনাকে প্রোডাক্ট কিনতে আগ্রহী করে?
যদি আপনার উত্তর হয় “হ্যাঁ, প্রতিটা অ্যাড দেখলেই কিনি!” তাহলে আপনি নিঃসন্দেহে একেবারে লিজেন্ড! তাহলে আপনার কনটেন্টের গুরুত্ব বোঝানোর প্রয়োজনই নেই।
কিন্তু যদি বলেন —
“না ভাই, সব অ্যাড তো আর কিনি না!”
তাহলে এবার একবার চিন্তা করুন — কোন অ্যাডটা দেখে আপনার সত্যিই আগ্রহ জেগেছিল? অথবা একই প্রোডাক্টের অনেক ব্র্যান্ডের অ্যাড দেখেও কেন শুধু একটা ব্র্যান্ডের ওপর আপনার আস্থা তৈরি হয়েছিল?
উত্তরটা খুবই সহজ —
ভালো প্রোডাক্ট আর ফেসবুক অ্যাডস একা যথেষ্ট নয়। মানুষের মনে জায়গা তৈরি করতে হয়,বিশ্বাস গড়তে হয় — আর সেটা সম্ভব আকর্ষণীয়, ইমোশনাল ও ক্রিয়েটিভ কনটেন্টের মাধ্যমে।
ভাবুন, “প্রাণ” বা “রাধুনী” ব্র্যান্ডগুলো কীভাবে আমাদের মনে গেঁথে গেছে?
তারা শুধু প্রোডাক্ট বিক্রি করেনি — তারা গল্প বলেছে, অনুভূতি জাগিয়েছে, ধারাবাহিকভাবে সম্পর্ক তৈরি করেছে। এই ধারাবাহিক কনটেন্টই তাদের শক্তি।
অনলাইন উদ্যোক্তাদের অনেকের প্রোডাক্ট ভালো,
তবুও বিক্রি কম হয় কেন?
কারণ তারা এখনো কনটেন্টকে স্ট্র্যাটেজির কেন্দ্রবিন্দুতে রাখে না।
তাদের মূল ভাবনা — “ফেসবুকে টাকা ঢাললেই সেলস আসবে।” কিন্তু বাস্তবতা হলো — বিজ্ঞাপন কেবল দরজা খুলে দেয়, কনটেন্টই সেই দরজা দিয়ে মানুষকে ভেতরে আনে।
তাই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ —
ব্যবসার শুরুতেই অন্যের ওপর নির্ভর না করে নিজেই শিখুন কনটেন্ট তৈরি ও অ্যাড ম্যানেজমেন্ট। কারণ, আপনার ব্র্যান্ডের কথা আপনার চেয়ে ভালো কেউ বলতে পারবে না।
মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি:
উদ্যোক্তারা এখন প্রায়ই শুনছেন —
“শুধু কনটেন্ট থাকলেই হবে না, সেলস বাড়াতে সঠিক মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি দরকার।”
কিন্তু এই “স্ট্র্যাটেজি” কথাটাই অনেকের মনে নতুন এক কনফিউশন তৈরি করে। আসলে এই স্ট্র্যাটেজি ঠিক কীভাবে সেলসে ভূমিকা রাখে? চলুন, এবার একটা বাস্তব ব্যবসার উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করা যাক।
ধরুন, আপনি একটি নতুন কফি ব্র্যান্ড চালু করলেন।
প্যাকেজিং সুন্দর, দামও প্রতিযোগিতামূলক — কিন্তু বাজারে তো আগে থেকেই অনেক বড় ব্র্যান্ড আছে: Nescafé, Coffee House, Bru ইত্যাদি।
এখন যদি আপনি শুধু ফেসবুক অ্যাডে লিখে দেন,
“আমাদের কফি সবচেয়ে ভালো!” — তাহলে কি সবাই আপনাকে কিনবে?
না, কারণ মানুষ ইতিমধ্যেই অন্য ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থাশীল।
তাহলে এখন কী করবেন?
সরাসরি “Buy Now” না বলে, প্রথমে তাদের মন জয় করতে হবে।
এখানেই আসে স্ট্র্যাটেজি প্ল্যানিং — যার মাধ্যমে আপনি ক্রেতার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন, বিশ্বাস তৈরি করবেন, তারপর সঠিক সময়ে বিক্রয় প্রস্তাব দেবেন।
চলুন দেখি, এই কফি ব্র্যান্ডের জন্য স্ট্র্যাটেজির ৫টি ধাপ কেমন হতে পারে :
ধাপ ১: Awareness (চেনানো)
প্রথমে এমন কনটেন্ট তৈরি করুন যা মানুষকে আপনার ব্র্যান্ড চিনতে সাহায্য করে —
যেমন “Morning without Coffee = Error 404 ☕” এর মতো রিল, পোস্ট বা মেমে।
ধাপ ২: Engagement (আগ্রহ তৈরি)
এরপর কিছু কনটেন্ট বানান যা কফিপ্রেমীদের সাথে কানেক্ট করে —
যেমন, “আপনার সকালটা কোন কফি ফ্লেভারে শুরু হয়?”
এইভাবে মানুষ আপনার পেজে কথা বলবে, কমেন্ট করবে।
ধাপ ৩: Relationship (বিশ্বাস গড়া)
এখন নিয়মিতভাবে মানসম্মত তথ্য দিন —
“কফির উপকারিতা”, “বীনের উৎপত্তি”, “কীভাবে আমরা সতেজ রাখি” ইত্যাদি।
মানুষ বুঝবে আপনি শুধু বিক্রি নয়, ভ্যালু দিচ্ছেন।
ধাপ ৪: Conversion (অফার দেওয়া)
এখন তাদেরকে বিশেষ অফার দিন —
“First 100 buyers get free mug!”
বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে বিক্রি শুরু হবে।
ধাপ ৫: Retention (গ্রাহক ধরে রাখা)
শেষ ধাপে ক্রেতাকে ধরে রাখুন —
রিভিউ চান, কফি কমিউনিটি বানান, রিওয়ার্ড দিন। তারা শুধু গ্রাহক নয়, হয়ে উঠবে আপনার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
এইটাই হলো মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। এটা শুধু কনটেন্ট পোস্ট করা নয় — এটা একটি পরিকল্পিত পথ, যেখানে প্রতিটি ধাপে ক্রেতা আপনার কাছাকাছি আসে।
যদি এই স্ট্র্যাটেজি ঠিকভাবে অনুসরণ করেন —
✅ সেলস বাড়বে,
✅ ফেসবুক অ্যাডের খরচ কমবে,
✅ আর সময়ের সাথে অর্গানিকভাবেই অর্ডার আসবে।
এভাবেই বড় ব্র্যান্ডগুলো মানুষের মনে জায়গা করে নেয়, অ্যাড না চালালেও, তারা আমাদের মনে থেকে যায়।
ল্যান্ডিং পেজ:
অনেক উদ্যোক্তা মনে করেন —
“শুধু ফেসবুক পেইজ থাকলেই হবে।”
হ্যাঁ, ফেসবুক পেইজ থাকা অবশ্যই জরুরি। এটি আপনাকে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে, যোগাযোগ বাড়ায়, এবং প্রোডাক্ট প্রদর্শন করতে সহায়ক।
কিন্তু বাস্তবতা হলো — শুধু ফেসবুক পেইজ দিয়েই সেলসের পুরো সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব নয়।
ভেবে দেখুন:
ফেসবুক পেইজ হচ্ছে একটি ভ্যান গাড়ি যা প্রোডাক্ট বিক্রি করে। আর ল্যান্ডিং পেইজ হচ্ছে আপনার নিজের দোকান। আপনি চাইলে ভ্যান থেকে প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারেন, তবে মানুষ এখনও কেন দোকান ভাড়া করে? কারণ, দোকান দেয় মানুষকে বিশ্বাস, স্বাচ্ছন্দ্য, এবং ক্রেডিবিলিটি।
ক্রেতারা ভালোভাবে সাজানো দোকান থেকে কিনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ডিজিটাল জগতে সেই দোকানই হলো আপনার ল্যান্ডিং পেইজ।
ল্যান্ডিং পেইজ হলো আপনার ডিজিটাল স্টোরফ্রন্ট। কত সুন্দর করে এটি সাজানো, প্রোডাক্ট সম্পর্কিত সব তথ্য দেয়া আছে কি না, কত সহজে ক্রেতা কিনতে পারবে — এই বিষয়গুলোই নির্ধারণ করে একজন ভিজিটর কিনবে কি না।
ল্যান্ডিং পেইজে ক্রেতা পাঠানোর কাজটি আসে ফেসবুক পেইজ থেকে। আকর্ষণীয় কনটেন্ট এবং স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডের মাধ্যমে মানুষকে ল্যান্ডিং পেইজে নিয়ে আসা যায়।
যদি আপনার ল্যান্ডিং পেইজে অনেক ভিজিটর আসে, তাহলে বুঝতে হবে —
✅ আপনার ফেসবুক কনটেন্ট কার্যকর হয়েছে।
কিন্তু যদি মানুষ আসে কিন্তু কিনে না, তাহলে বোঝা যায় —
❌ আপনার স্ট্র্যাটেজি বা ল্যান্ডিং পেইজে কিছু পরিবর্তন দরকার।
ক্রেতাকে কনভার্ট করার জন্য আরও ক্রিয়েটিভ আইডিয়া এবং সেলস ফানেল অপটিমাইজেশন প্রয়োজন।
মার্কেটিং ভাষায় এটাকে বলে CRO (Conversion Rate Optimization) — ভিজিটরকে ক্রেতায় রূপান্তর করার বিজ্ঞান।
সংক্ষেপে:
👉 ফেসবুক পেইজ মানুষকে আকর্ষণ করে।
👉 ল্যান্ডিং পেইজ মানুষকে কিনতে প্রলুব্ধ করে।
উভয় একসাথে মিললে আপনার ডিজিটাল সেলস সাইকেল পূর্ণ হয়। দুইটির কোনোটিই না থাকলে আপনার মার্কেটিং পুরো শক্তি দিয়ে কাজ করবে না।
আর যদি চান যে Elitbuzz Technologies Ltd. আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য কনটেন্ট তৈরি করে মার্কেটিং দেবে তাহলে আমাদের থেকে সাপোর্ট নিতে পারেন।